সুনামগঞ্জ , বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ , ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বিশিষ্ট সমাজসেবক নূরুল হক মহাজন স্মরণে সভা ধর্মপাশায় প্রথম কিস্তির টাকা না পাওয়ায় বিপাকে পিআইসিরা উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশ সুনামগঞ্জ সীমান্তে এক বছরে ১০ মৃত্যু আটক দেশি-বিদেশি ৪৪ নাগরিক বিজিবি’র অভিযানে কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ বাংলাদেশ ব্যাংকের লোগো ব্যবহারে সতর্কতা জারি দ্রুত গতিতে চলছে উড়াল সড়ক প্রকল্পের ৯ প্যাকেজের কাজ রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য ছাড়া সংস্কার প্রতিবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না : ফখরুল আ.লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই: প্রেস সচিব এক বছরে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, ৪৬ শতাংশই স্কুল-পড়ুয়া জেলা পর্যায়ে আন্তঃকলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন যা সংস্কার করা দরকার, তা রাজনৈতিক সরকারই করবে : আসাদুজ্জামান রিপন হাওরে কমছে দেশি ধান চাষ আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা সে সিদ্ধান্ত জনগণের : মির্জা ফখরুল আগাছা রয়ে গেছে, আবারও যুদ্ধের প্রস্তুত নিন : জামায়াত আমির সরস্বতীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিদ্যালয়ের জমি প্রভাবশালীর দখলে জেলা পর্যায়ে জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন দোয়ারাবাজার সীমান্তে ভারতীয় দুই নাগরিক আটক নির্বাচন করতে এত সংস্কার দরকার নেই : জয়নুল আবদিন ফারুক ঘোষণাপত্র নিয়ে ‘তড়িঘড়ি’ করার বিপক্ষে রাজনৈতিক দলগুলো

সুনামকণ্ঠ এবং আমি: আকরাম উদ্দিন

  • আপলোড সময় : ০১-০১-২০২৫ ১২:৫৭:৫৮ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০১-০১-২০২৫ ১২:৫৭:৫৮ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ এবং আমি: আকরাম উদ্দিন ছবি: মো. আকরাম উদ্দিন। স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সুনামকন্ঠ।
আজ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ। নতুন বছরের পহেলা জানুয়ারি। এই দিনে দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকার প্রিয় পাঠকমহল, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই শুভ নববর্ষ এবং পত্রিকার ১১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন ও প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। সচেতনতা, আস্থা ও বস্তুনিষ্ঠতায় পাঠকপ্রিয় সুনামকণ্ঠ দৈনিকে ১১ বছরে পদার্পণ করেছে। সাপ্তাহিক হিসেবে পথচলার ১৩ বছর পর দৈনিকের ১০ বছর অতিক্রান্ত হলো। এটা অগণিত পাঠকের উৎসাহ ও প্রেরণার স্বীকৃতি। সকল শ্রেণিপেশার অগণিত পাঠক না থাকলে পত্রিকা বের করাটাও ব্যর্থতার গ্লানিতে হাবুডুবু খেতে হয়। আড়ালে নানা জনের নানা মন্দ কথা শুনতে হয়। নিয়মিত প্রকাশনা না থাকলে পাঠকমহলেও হতাশার সৃষ্টি হয়। দৈনিক সুনামকণ্ঠ ‘সত্য প্রকাশে দ্বিধাহীন’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এখনো পাঠকপ্রিয় হয়ে প্রকাশনায় এগিয়ে চলছে। এই পথচলায় ২০০১ সালের ১ আগস্ট থেকে যখন আমি সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠে যোগদান করি। প্রকাশনার শুরুর দিকে অফিসে বসে আলোচনা, পর্যালোচনা এমনকি সমালোচনাও করতেন প্রিয় পাঠকমহল। এই সমালোচনা সংশোধনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে সুনামকণ্ঠ আলোচনায় চলে আসে এবং আলোড়ন সৃষ্টি করে সারা জেলায়। সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে এবং গ্রাম-গঞ্জে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ওই সময়কালে সুনামকণ্ঠ পাঠকের পুরো মাঠ দখলে ছিল। বড় আকারের পত্রিকা (ডবল ডিমাই) এবং জেলার একমাত্র নিয়মিত পত্রিকা ছিল এই সুনামকণ্ঠ। পত্রিকার স্টাফ ও লেখকবৃন্দ ছিলেন সর্বাবস্থায় সচেতন এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রেরণে সোচ্চার। প্রত্যেকের কাজ নির্ধারণ করা থাকতো। সংবাদের কে, কি, কোথায়, কিভাবে কাজ করবেন তাও নির্ধারণ করে দেয়া হতো। রিপোর্টারদের সক্রিয়করণে তখন সংবাদ তৈরি বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালাও অনুষ্ঠিত হতো সদর উপজেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে। একাধিক নারী সাংবাদিকও তৈরি করেছে এই সুনামকণ্ঠ। এভাবে পত্রিকা প্রকাশনার নেশায় পড়ে শ্রদ্ধেয় স¤পাদক বিজন সেন রায় দাদা এক সময় মূল শহরে তার অতি মূল্যবান জায়গা বিক্রি করে ফেলেন। পত্রিকার প্রকাশনা অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে এমনটিই বুকে ধারণ করলেন তিনি। দীর্ঘ পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে আজ সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ নয়, দৈনিক সুনামকণ্ঠ পত্রিকায় আনন্দ নিয়ে কাজ করতে পেরেছি। আমরা সাপ্তাহিকের ১৩ বছর পর দৈনিকে রূপান্তর করতে পেরেছি সুনামকণ্ঠকে। প্রিয় পাঠক, এবার দৈনিকের ১১ বছরে পদার্পণ হলো। সব মিলিয়ে ধরে নিতে পারেন সুনামকণ্ঠ’র ২৫ বছরে পদার্পণ। এই পঁচিশ বছরে কত লক্ষ নিয়মিত পাঠক সৃষ্টি হয়েছেন, তা পত্রিকা কর্তৃপক্ষও জানেন না। কারণ এখন কাগজে সুনামকণ্ঠ, অনলাইনে সুনামকণ্ঠ, ভিডিও পেইজে সুনামকণ্ঠ, ফেসবুকে সুনামকণ্ঠ, ওয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারে সুনামকণ্ঠ এবং বিভিন্ন গ্রুপে সুনামকণ্ঠ সংবাদ আদান-প্রদান হচ্ছে। সুনামকণ্ঠ’র প্রকাশনা শুরু হয় ১৩ জুলাই ২০০১ সালে। কিন্তু আমি যোগদান করি পহেলা আগস্ট ২০০১ সাল। অর্থাৎ দুই সংখ্যা প্রকাশের পর। এ সময় সাইফুল ইসলাম পত্রিকার প্রথম বার্তা স¤পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় শহরের রহমানিয়া প্রেস থেকে পত্রিকা ছাপা হতো। তখন থেকে আমার সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার বিজন দা’র দায়িত্বে। ঈদের খরচেরও যোগানদাতা বিজন দা। পত্রিকায় প্রকাশিত ছোট ছোট বিজ্ঞাপনের টাকা সবই আমার। আমার আর্থিক সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্র ছিলেন বিজন দা। আর পত্রিকার সকল কাজ দেখাশোনা সবই আমার। ওই সময় থেকে বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহে শহর ও শহরতলিতে কাজ করতে যাদেরকে পেয়েছি- বর্তমান কালেরকণ্ঠের শামস শামীম, জামালগঞ্জের অঞ্জন পুরকায়স্থ ও তৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ, প্রবাসী দেলোয়ার হোসেন, বর্তমানে সদর উপজেলা মঙ্গলকাটা ব্রাঞ্চের ব্র্যাক ম্যানেজার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বদরুল কাদির শিহাব, বর্তমান এনজিও কর্মকর্তা রুনা লস্কর ও রূপা লস্কর, সেজুল হোসেন, বিদ্যুৎ সরকার, শুভাকাক্সক্ষী জাহাঙ্গীর আলমসহ আরও কয়েকজন। এভাবে চলতে চলতে পরবর্তীতে এই পত্রিকার লেখা দেখা ও গেটআপ-সেটআপের দায়িত্ব নেন আলোকিত সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী ও খলিল রহমান। উল্লেখ্য, সুনামকণ্ঠ নামকরণটিও করেছিলেন সাংবাদিক উজ্জ্বল মেহেদী। সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ’র লোগোটিও তৈরি করেছিলেন উজ্জ্বল মেহেদী। এছাড়াও কলাম লেখকদের মধ্যে পেয়েছি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. হোসেন তওফিক চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. আবু আলী সাজ্জাদ হোসাইন, প্রবীণ শিক্ষাবিদ লেখক ও কলামিস্ট মু. আব্দুর রহীম, প্রফেসর সীতেশ আচার্য্য, প্রফেসর ন্যাথানায়েল এডউইন ফেয়ারক্রস, প্রফেসর দিলীপ কুমার মজুমদার, প্রফেসর আব্দুল মুহিত, প্রফেসর মামুনুর রশিদ, প্রভাষক ইলিয়াছ মিয়া, প্রভাষক শাহাদাত হোসেন, কবি ইকবাল কাগজী, হাসান আফরোজ, অ্যাড. আবুল হোসেন, অ্যামেরিকা প্রবাসী লেখক রণেন্দ্র তালুকদার পিংকু, শিক্ষক-লেখক কোহিনূর বেগম, নাসরিন আক্তার খানম, নমিতা সরকার, তৎকালীন সুনামগঞ্জের এন.এস.আই অফিসার তোবারক আলী, কবি শেখ একেএম জাকারিয়া, আলী সিদ্দিক প্রমুখ। ২০০৩ সালে পেয়েছি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কবি পুলিন রায়, বার্তা স¤পাদক শাহার উদ্দিনসহ আরও কয়েক জনকে। ২০০৭ সালে রিপোর্টার হিসাবে যোগদান করেন রেজাউল করিম। এনালগ যুগের সংবাদকর্মী হয়েও যখন ডিজিটাল যুগের এই সুনামকণ্ঠে আমি যোগদান করি, তখন এই পত্রিকা ক¤েপাজ এবং সেটআপ করতেন রেনেসাঁ ক¤িপউটারের মালিক আব্দুল করিম অলি ভাই। এই পত্রিকা সিলেটের ডাক অফিস থেকে পেইসটিং করিয়ে ছেপে আনার দায়িত্ব ছিল অলি ভাইয়ের। প্রতি মঙ্গলবার ছিল পত্রিকা প্রকাশের দিন। এর প্রায় একমাস পরই আমি সাহস করে পত্রিকা পেইস্টিংয়ের দায়িত্ব নিই। নতুন প্রজন্মের জানার জন্য যে কথা বলতেই হয়- এক সময় সারাদেশের পত্রিকা বা অন্যান্য বই পুস্তক সবই লেটার প্রেস থেকে ছেপে বের করা হতো। লেটার প্রেসের কাজ হলো-দিয়াশলাইয়ের কাঠির ন্যায় এক ইঞ্চি লম্বা সীসার চিকন কাঠির উপর অক্ষর উল্টোভাবে বসানো থাকতো। পিতলের স্টিকের উপর এক এক করে কুড়িয়ে কুড়িয়ে সংযুক্ত করে শব্দ তৈরি করে বাক্যে পরিণত করতেন ক¤েপাজিটরগণ। পরবর্তীতে পত্রিকার একটি পৃষ্ঠা সেটআপ করা হতো। এটাকে ছাপা করার জন্য ট্রেডেল মেশিনে, অফসেট মেশিনে বা হাইড্রেলভার মেশিনে ইমপোজ করে মানে কাঠ দিয়ে বেড়িকেড করে ফিটিং করে ছাপানো হতো পত্রিকা। আবার সংবাদের মধ্যে কোনো ছবি যুক্ত করতে হলে তা জিংকের উপর ব্লক করে লাগানো হতো। এছাড়াও এক ইঞ্চি কাঠের উপর উল্টো করে অক্ষর থাকতো। তাও একইভাবে ফিটিং করা হতো। কাজের সময় কেরোসিনের গন্ধ এবং কালি মাখা হাত থাকতো কম্পোজিটরগণের। তখন একজন ভাল শিক্ষিত এবং ধৈর্য্যশীল মানুষ ছাড়া এই কাজ করা সম্ভব ছিল না। কারণ যেকোনো সময় শব্দ, বাক্য বা পুরো লেখাটি ভেঙে পড়ার ঝুঁকি থাকতো। একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার ৪ পৃষ্ঠার কাজ করতে চার জনে মিলে অন্তত চারদিন লাগতো। এই কাজগুলো করতে আমার একার মাত্র চার দিন লাগতো। তখনকার সময়ে হাতে-কলমে কাগজে রিপোর্ট লিখে দেওয়ার পর কী পরিমাণ কষ্টের কাজ সামনে থাকতো তা অনুধাবনের জন্য এই বিষয়গুলো উল্লেখ করেছি। সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, এই লেখার সুযোগে পত্রিকায় লেখালেখিতে আমার স¤পৃক্ত হওয়ার কিছু বিষয় উল্লেখ করতে চাই। সেটি হলো-১৯৮৪ সালের শেষের দিকে বালুর মাঠ নামে পরিচিত বর্তমান পৌর মার্কেটের উত্তর-পূর্ব কোণে নাছিমা প্রিন্টিং প্রেসে অ্যাড. বজলুল মজিদ চৌধুরীর স¤পাদিত ‘সাপ্তাহিক সুনাম’ পত্রিকায় কয়েক বছর ক¤েপাজিটর (শব্দ সংযোজন) এর কাজ করেছি। এ কাজে আমি যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছিলাম। তখন থেকে পত্রিকা পড়া এবং সংবাদ লেখার বিষয় নিয়ে গভীর ভাবনায় পড়ি। ১৯৮৭ সালে সুরমা মার্কেটের উত্তরের সারিতে সুরমা প্রেসে রেজাউর রহমান রেজা সম্পাদিত ‘সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ’ পত্রিকায় ‘ফোরম্যান’র দায়িত্ব পালন করেছি এবং এই পত্রিকার ‘প্রুফরিডার’ এর কাজ করেছি। একই সাথে পত্রিকার ‘মেকাপম্যান’ও ছিলাম। মেকাপম্যান হলেন, যিনি পত্রিকার এক পৃষ্ঠা করে উল্টোভাবে কলাম করে করে বসিয়ে সেটআপ করার দক্ষতা আছে। এই সময় থেকে সংবাদ লেখার হাত তৈরি হয় আমার। কিন্তু গোপনে অনেক সংবাদ প্রেরণ করতাম স¤পাদকের কাছে। ওই পত্রিকার বার্তা স¤পাদক ছিলেন তখন আবুল কালাম আজাদ। তিনি জানতেন আমার সংবাদ লেখার বিষয়টি। এক পর্যায়ে ১৯৮৯ সালে সাংবাদিকতার কার্ডপ্রাপ্ত হই। পদবী ছিল ‘নিজস্ব সংবাদদাতা’। পরবর্তীতে এই পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯০ সালে দেওয়ান ইমদাদ রেজা চৌধুরী স¤পাদিত ‘সাপ্তাহিক সুনামগঞ্জ সংবাদ’-এর প্রুফরিডার ও মেকাপম্যান ছিলাম। সংবাদ সংগ্রহের কাজ ও করতাম। বিজ্ঞাপন সংগ্রহের দায়িত্বও ছিল আমার। দীর্ঘদিন প্রকাশনার পর ২০০০ সালে নানা কারণে এই পত্রিকাটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর জেলার বাইরের বিভিন্ন দৈনিকে কাজ করি আমি। এর প্রায় দেড় বছর পর যোগদান করি সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠে। এ সময় থেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখা আমি খুবই পছন্দ করি। ধারাবাহিক অনেক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। দোয়ারাবাজারে মিথ্যা অস্ত্র মামলায় ফাঁসানো প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘অস্ত্র কী আমি চিনি না’, ‘জাউয়া বাজারে ভুঁয়া কাজী’, সদর উপজেলায় ‘ভ- পীরের আস্তানা’। ধারাবাহিক ‘বেলা-অবেলা’। মরমী কবি এলাহীবক্স মুন্সী’র জীবন কাহিনী। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, মুক্তিযোদ্ধার জীবন-জীবিকা, গরীব-মেহনতি মানুষদের নিয়ে প্রতিবেদন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদনসহ প্রভৃতি বিষয়ে লেখালেখি ছিল আমার। প্রথম দিন সাপ্তাহিক সুনামকণ্ঠ’র পেইস্টিং করে সিলেট থেকে পত্রিকা ছেপে এনে সফলতার সাক্ষর রাখি। পরবর্তীতে শুধু ক¤েপাজ সিট বের করে দিয়েই অলি ভাই মুক্তি পেতেন। তখন পত্রিকার চাপ কমে আসলো অলি ভাইয়ের। এরপর কিছুদিন ক¤েপাজের কাজ করেন আলী সিদ্দিক। তিনি একজন গল্পকার, নাট্যভিনেতা ও নাট্যকার ছিলেন। কিছুদিন পর এই কম্পোজের কাজটিও নিজেরাই করতে উদ্যোগ নিই। যেমন কথা তেমন কাজ। সম্পাদক বিজন দা ঢাকা থেকে কিনে আনেন নতুন কম্পিউটার। তখন অপারেটরও পেয়ে যান শিমুল নামের একটি ছেলেকে। সে কিছুদিন অপারেটিংয়ের কাজ করেছে। তবে সে ঢাকায় ক¤িপউটারে কাজ করতো। তাই বেশিদিন তাকে ধরে রাখা যায়নি। ওই সময়কালে অফিসে যোগদান করেন মিল্লাত আহমেদ। সে অফিসের দেখাশোনা করতো। এখনও মিল্লাত আছেন সুদক্ষ ক¤িপউটার গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসাবে হক প্রিন্টিং প্রেসে। আছেন দৈনিক সুনামকণ্ঠ’র গ্রাফিক্স ইনচার্জের দায়িত্বে। ছেলেটি ভালো কবিতাও লিখে। ২০০২ সালে বিজন দাদা তার স্কুলপড়–য়া ছেলে বিশ্বজিৎ সেন পাপনকে সুনামকণ্ঠে যুক্ত করেন। আমার ১৯৯৯ সালে শেখা যৎসামান্য কম্পিউটারের অভিজ্ঞতা প্রিয় পাপনকে বিলিয়ে দেই। এক সময় সব অন্ধকার কেটে আলোতে আসে পত্রিকার কঠিন কঠিন ও মগজধোলাইয়ের কাজগুলো। পত্রিকা পেস্টিংয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতি সোমবার রাত গভীর হয়ে যেতো। সুরমা নদীর ফেরি পারাপারেও সমস্যা হতো। এক সময় জোটে নিলাম প্রবীণ ব্যক্তি সাজাউর রহমান ভাইকে। তিনি আমাদের পাশের বাড়ির বাসিন্দা। রাতের চলায় সাজাউর ভাই আমার নিত্যসঙ্গী। ফেরি পারাপারে আমার আর কোনো চিন্তা নেই। গভীর রাত পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করে বাড়ি ফিরতাম আমরা। রাতের বেলায় বিজন দাকেও ফেরি নৌকা করে নদী পথে ষোলঘর বাসায় দিয়ে আসতাম। দিনে ও রাতে সাজাউর ভাই ছিলেন পত্রিকা পরিবারের অন্যতম সদস্য। শত কষ্টের মধ্যেও আমাদের সুনামকণ্ঠ পরিবারে আনন্দ-বিনোদনের শেষ ছিল না। প্রায় ১৩ বছর পর পত্রিকায় দৃষ্টি পড়লো সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জিয়াউল হকের। তিনি পত্রিকাটির অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এগিয়ে এলেন। কর্ণধার হয়ে দায়িত্ব নেন পত্রিকা প্রকাশনার। পত্রিকা কর্তৃপক্ষ স¤পাদকম-লীর সভাপতির দায়িত্ব চাপিয়ে দেন তার উপর। মো. জিয়াউল হকের আন্তরিক সহযোগিতা এবং সমর্থনে দৈনিক সুনামকণ্ঠ দীর্ঘ ১০ বছর পারি দিয়ে ১১ বছরে পদাপর্ণ করলো। তার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ না করলে সুনামকণ্ঠ’র প্রতি আমার কার্পণ্যতা হবে। দেশের ১৩জন আলোকচিত্র সাংবাদিকের বয়ানে ওই সময়ের কিছু গল্প নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল ‘কারারুদ্ধ চিরকুট ও অন্যান্য গল্প’। ১০ দিনব্যাপী এ আলোকচিত্রে উঠে এসেছে ‘৩৪ বছর’ শিরোনামে আমার সাংবাদিকতা জীবনের গল্প। বিগত ২০২১ সালের ১০ মার্চ থেকে ঢাকা পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ২০ মার্চ পর্যন্ত চলছিল। এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে বিভিন্ন দেশ বিদেশের গুণিজনদের সমাগম হয়েছিল। ওই বছর ১৪ মার্চ রবিবার বিকেলে প্রদর্শনী দেখতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন সপরিবারে আসেন। তিনি ঘুরে ঘুরে দেখেন দেশের ১৩ জন বাছাই করা সাংবাদিককে নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এসময় সুনামগঞ্জের চ্যানেল-২৪ এর প্রতিনিধি এ আর জুয়েলের আলোকচিত্রের ‘৩৪ বছর’ নিয়ে প্রশংসা করে তিনি বলেন, গ্রামীণ সাংবাদিকদের এমন সুন্দর এবং বাস্তব একটি গল্প সত্যিই অসাধারণ। তিনি আলোকচিত্র ও আমার লেখা নিয়ে সংগ্রামী সাংবাদিকতার ভূয়সী প্রশংসা করেন। এরপর অনুষ্ঠানে আমাকে উপহার তুলে দেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী, কিউরেটর ও অ্যাক্টিভিস্ট শহিদুল আলম। পরবর্তীতে আমার সাংবাদিকতায় জীবন-জীবিকা নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠান একটি গ্রন্থ প্রকাশ করে। এখন কথা হলো-এই ছবি, এই লেখাগুলো কোন পত্রিকার? দেয়ালে সযতেœ ফ্রেম করে রাখা বা বেঁধে রাখা হয়েছিল। জেনে রাখুন এর বেশিরভাগ লেখাই ছিল এই সুনামকণ্ঠ’র। ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের কপিগুলো সযতেœ রাখা হয়েছিল। এটা সুনামকণ্ঠের সুনাম। বর্তমানেও দৈনিক সুনামকণ্ঠ অফিসে পাঠক সমাবেশ অব্যাহত আছে। এখন বয়সে ন্যুব্জ বৃদ্ধ সাজাউর ভাই’র চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। সাজাউর ভাইয়ের পরিবর্তে সাবেক তহশীলদার এরশাদ মিয়া ও ইসমাইল হোসেন ভাইকে আমরা পেয়েছি। তারা সকাল থেকে নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। রঙ্গ-রসের অভিনেতা তারা দু’জনই। বিজন দা কো-অর্ডিনেট করেন। প্রায় প্রতিদিন আমি, আলীনুর ভাই, মানব দা, আনোয়ার চাচা, জেলা ক্যাবের সাবেক সভাপতি আব্দুল আওয়াল, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা নৃপেশ রঞ্জন তালুকদার নানু, দেবল তালুকদার, রওনক বখত প্রমুখ আমরা শ্রোতা হিসাবে রঙ্গরস উপভোগ করি। এবার নতুন সংবাদকর্মী হিসাবে সুনামকণ্ঠে যুক্ত হয়েছেন জিয়াউর রহমান, তানভীর আহমদ ও মোহাম্মদ নুর। একজন সৎ সংবাদকর্মী হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হতে তারাও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সিনিয়র হিসাবে আছি আমি আকরাম উদ্দিন, শামস শামীম ও শহীদ নুর আহমদ। অফিস সহায়ক হিসাবে আছেন জাবেদ মিয়া। প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমার ব্যক্তিগত অগোছালো কিছু লেখায় এবং আমার দর্শনে সুনামকণ্ঠের কিঞ্চিৎ পুরাতন ইতিহাস তুলে ধরায় কোনো ত্রুটি বিচ্যুতি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই অনুরোধ রেখে আবারও সবাইকে বর্ষপূর্তির শুভেচ্ছাসহ শুভ নববর্ষের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে সকলের সুস্বাস্থ্য ও মঙ্গল কামনা করি। [লেখক আকরাম উদ্দিন : সাংবাদিক, গবেষক ও গল্পকার]

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স
বিশিষ্ট সমাজসেবক নূরুল হক মহাজন স্মরণে সভা

বিশিষ্ট সমাজসেবক নূরুল হক মহাজন স্মরণে সভা